রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

একজন আদর্শ ছাত্রের ময়নাতদন্ত

He is a good student.
সে একজন ভাল ছাত্র(!)।

ভাল ছাত্র/ছাত্রী!
কথাটা শুনলেও আমার কেন যেন হাসি আসে। কারণ ভাল ছাত্র মানেটা কী? সজ্ঞা কী?  কতগুলো A+ এর সমষ্টি! নানা এখন সেটা Golden(!) A+ এর সমষ্টি। একটা ছাত্র PSC, JSC, SSC, HSC তে গোল্ডেন A+ এবং বিভিন্ন সরকারি বৃত্তিধারী, সে হল একজন ভাল বা অদর্শ ছাত্রের রোল মডেল। আমি আসলে এখনো নিশ্চিত নই এত A+ ধারীকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি উপাধিতে ঘোষিত করেছে বা করবে। তারপর সেই A+ ধারণকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে শুরু হবে CGPA এর জন্য লড়াই। যারা 3.5+ রাখতে পারবে শুধু তারাই ভাল ছাত্র। BCS পরীক্ষা দিতে যাবেন তো দেখবেন মেধাবীদের তুলনায় কোটা ও দলীয়দের প্রভাব বেশি।

আচ্ছা বাকি সব ছাত্র বা ছাত্রীরা শিক্ষার্থী জগতের কলঙ্ক? তারা কি জীবনযাপন করতে পারে না? সে কি করে চলে যে পড়ালেখাই করেনি?
ছাত্রসমাজ এর বেশিরভাগ হল অমনোযোগী ছাত্র আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী, আমাদের সমাজের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী। তাহলে তারা কেন পড়াশোনা করে? সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাবীদের জায়গা দেওয়ার পর মেধাহীনদের জন্য কেন এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়? একটা দেশের সাবেক আমলা এবং মন্ত্রী যখন বলেন যে পিলার ধরে নাড়াচাড়া করলে বহুতল বিল্ডিং ধসে পড়ে তখন আমার মনে হয় আমরা আসলে মগেরমুল্লুকে আছি।

এখানে একজন ছাত্রের নিজস্ব কোনো ইচ্ছা নেই। বাবা-মা চায় তার সন্তান ডাক্তার হবে তাই তাকে ডাক্তার হতেই হবে। বাবা-মা চায় ইঞ্জিনিয়ার, উকিল বা ফার্মাসিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু একজন ছাত্রের নিজের কোনো ইচ্ছে নেই। কেউ যদি লেখক,গায়ক অথবা চিত্রশিল্পী হতে চায় তবে আমরা তাকে বাঁকা চোখে দেখি যেন কোনো ভিন গ্রহ থেকে আগত প্রাণী। মাঝে মাঝে ভাবি সবাই যদি সেরা বিষয়গুলো পড়ার জন্য পাগল হয়ে থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা, ইতিহাস, চারুকলা, সমাজবিদ্যা, পালি এগুলো কারা পড়ে? তারাও তো আমাদের মত মানুষ।

A+ এর কথা বললে বলতে হবে ঢাকা বোর্ডে চলে যান। সেখানে সব অতিমেধাবী শিক্ষার্থী, যাদের শিক্ষকেরা(সম্মান রেখেই বলছি) পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন সমাধান করে দেন। ৮ বোর্ডে ৮ রকম প্রশ্ন কিন্তু A+ এর কোটা ৮০ এর ঘর ছুঁলে তারপরেই পাবেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাপনী পরীক্ষার্থীরা বড়দের কাছে ইন্টারনেটে কিভাবে প্রশ্ন পেতে হয় জিজ্ঞেস করে। JSC, SSC, HSC পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগেরদিন চাতক পাখির মত ফেইসবুকে ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের দিকে তাকিয়ে থাকে, এই বুঝি প্রশ্ন এলো।

অনেক A+ ধারীকে চিনি যাদের নিজে থেকে এক পৃষ্টা কিছু লিখতে বললে শুধুই ভুল বানান চোখে পড়বে। কারণ ভাল ছাত্ররা শুধু পাঠ্যবই পড়ে। আমাদের সমাজব্যবস্থা,  যে ছাত্র গল্পের বই পড়ে সে নষ্ট হয়ে গেছে। আমি যদি নাই জানলাম আমার আশেপাশের মানুষের জীবনব্যাবস্থা কেমন তাহলে আমার জীবনটা থেকেও না থাকার মত।

পরিশেষে,
একজন ছাত্র, তার বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ থাকতে পারে। বিভিন্ন বিষয়ে থাকতে পারে অনাগ্রহ। সব ছাত্রকেই যে ক্লাসের টপার হতে হবে এমনটা কখনোই নয়। সে সময় নেবে তার গতি বেছে নেওয়ার জন্য যেটা তার জন্য ভাল। সেজন্য তাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে দিতে হবে সে জ্ঞান। এই সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থা এর চোখে একজন অমনোযোগী ছাত্র হতে পেরে আমি গর্বিত।

বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, আগে একটা সময় ছিল যখন পরীক্ষায় পাশ করতো কম আর ফেল করতো বেশি। বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী দেখা যেত কয়েকবার পরীক্ষা দিয়ে তারপরই পাশ করতো। অনেককে SSC পরীক্ষার হলে যেতেই কয়েকবার টেস্ট পরীক্ষা দিতে হোত। তাদের প্রতি আমার অসংখ্য শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকে লিখা শেষ করছি। কারণ তারা চেষ্টা করে অনেক কঠিন পদ্ধতির মধ্যে পাশ করতো।

মুহাম্মদ আরিফ
৪ মে ২০১৭