মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ, ২০১৫

বাংলাদেশের মওকা

    বাংলাদেশ দল কোয়াটার ফাইনাল খেলবে বিশ্বকাপে। প্রতিপক্ষ চিরচেনা ভারত। ভারতকে বাংলাদেশ হারাতে পেরেছে এ পর্যন্ত ৪বার। আর খাতা কলমের হিসেবেও বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে। কিন্তু বিশ্বকাপে গিয়ে বাংলাদেশ কিছু অসাধারণ খেলা উপহার দিয়েছে। যা অন্যান্য সকল দলের কাছে মাথা ব্যাথার কারন হয়েছে। নার্ভাস ইংলিশদের হারিয়েছে, কিউইদের পায়ে কাঁপন ধরিয়েছে যা এই বিশ্বকাপে অন্তত ওরা অনুভব করেনি। ওপেনাররা জ্বলে উঠতে পারেননি তেমন, তবে মিডল অর্ডার আর লোয়ার অর্ডার এ ব্যাটসম্যানরা ভীষণ ভাল করেছে। ভারতীয় দলের কথা যদি বলি ওরাও অসাধারণ  ফর্মে আছে। এই বিশ্বকাপে খেলা ছয় ম্যাচের সবগুলোতে জিতেছে। প্রায় সব প্লেয়ারই ফর্মে আছে। তাই সবাই ভাবছে ১৯ মার্চের খেলাটা জমবে।
     এই বিশ্বকাপে ভারতীয় মিডিয়ার অন্যতম সেনসেশন হল 'মওকা' অ্যাড। এটি ভারতের বিভিন্ন ম্যাচের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এগুতে থাকে। প্রথমটি ছিল পাকিস্তানী সমর্থক কে নিয়ে। যার ক্ষোভ হল বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পকিস্তানের কোন ম্যাচ না জেতা। পাকিস্তানী এই সমর্থক কে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে নিয়েই চলতে থাকে এই অ্যাড। যার সর্বশেষ (এখন পর্যন্ত)  সেকুয়াল হল বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচ নিয়ে। যা এখনও (১৭.০৩.০১৫) পর্যন্ত টিভিতে দেখানো হয়নি। তবে শুনেছি অনলাইনে পাবলিশ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি অনেক খোঁজ করে দেখলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। কিছু সার্চ অপশন এ যে লিঙ্ক আসে সেখানে বলা হয় এটা মুছে ফেলা হয়েছে। ইউটিউব, স্টার স্পোর্টস এর ওয়েব সাইট কোথাও নেই। কিন্তু হ্যা এটা ছিল। অনেকেই দেখেছে। অনেকেই এটার রিপ্লাই ভিডিও ও বানিয়েছে দেখলাম। আবার অনেকে ভারচুয়াল জগতে এ নিয়ে ঝড় তুলছেন আবার কেউ কেউ চায়ের কাপে। বর্তমান সময়ে এটা সবার চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছ।
     এক লোকের বাসায় কলিং বেল বাজে। দরজা খুলতে যায় বুকে India লিখা এক লোক। দেখে যে বুকে Bangladesh লিখা এক ছেলে এসেছে। সে তাকে মানচিত্রের দিকে দেখায়।  যেখানে লিখা ছিল, India has created Bangladesh। তারপর বাংলাদেশ লিখা লোকটা ইন্ডিয়া লিখা লোকটিকে মাথা নিচু করে প্রনাম করে। মওকা, মওকা।
     এই ছিল সেই মওকা ভিডিও (যদিও আমি দেখিনি, যারা দেখেছে তাদের কাছ থেকে শোনা)। এখন প্রশ্ন হল ওরা এরকম ভিডিও কেন বানালো আবার রিমুভও করলই বা কেন।  কেন ওরা আমাদের ভিত্তি নিয়ে টানাটানি করল। কেন ওরা খেলার বিজ্ঞাপনে রাজনীতি নিয়ে এল! কারন ভারতীয় দের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ওরা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে নানা মন্তব্য করছে কিন্তু রাস্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ নিয়ে কোন প্রতিবাত করা হয়নি। সাধারণ মানুষ কিছু প্রতিবাদ করলেও কতিপয় বুদ্ধিজীবী(!) নামধারী লোকগুলো ছিল নির্বাক।  কারন ভারতকে তারা অনেক ভালবাসেন,  তাদের এ কথাগুলো সহ্য করতে না পারলে ভালবাসার আর কি মূল্য! তাই নয় কি! আমি রাজনীতিবিদ নই তাই বেশি কিছু বলতে চাই না।
      ভারতের বিভিন্ন গাল-মন্দে আমরা অনেকেই সমালোচনা করেছি আবার অনেকে চুপ করে থেকেছি। যাহোক, তবে আমার মনে হয় না এবার আমাদের এটা নিয়ে তেমন বাড়াবাড়ি করা উচিৎ। কারন ক্রিকেট হল শুধুমাত্র একটা খেলা। এতে রাজনীতি ঢুকানোর কোন দরকার বা এ থেকে কোন ফায়দা আমি দেখি না। ভারত সেই ভুলটি করেছে। অর্থাৎ কাঁদা ছুড়েছে। তাই বলে আমরা কেন আমাদের হাতে নোংড়া লাগাব! হ্যা, অনেকেই বলতে পারেন ওরা আমাদের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। তো!  আপনারা এতদিন কোথায় ছিলেন! ইতিহাস নয় যখন ওরা আমাদের বর্তমান, ফেলানি কে কাঁটা তারে ঝুলিয়ে রাখে! তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দেয় না! ক্রিকেটের কথায় আসি, ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক শক্তিশালী দল। যখন ওরা ইতিহাসে আঘাত করে আমাদের ক্ষুব্ধ করে তোলার চেষ্টা করছে তার মানে ওরা আমাদের ভয় পাচ্ছে। ভারতীয় দল না হলেও মিডিয়া পাচ্ছে। তাই এ কান্ড।
    বাংলাদেশ দলের এ বিশ্বকাপের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোয়াটার ফাইনালে যাওয়া। যা ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে। এরপর যা কিছুই হবে তাহল উপরি পাওনা। কারন কাপ জয়ের মত দল গঠন করতে আমাদের আরো সময় ও কঠোর পরিশ্রম এর দরকার। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য সফল অন্তত এ বিশ্বকাপে। তাই আমি মনে করি আগামী ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেলেও জাতি তাদের দোষারোপ করবে না। কিন্তু ভারত যদি হেরে যায় বাংলাদেশের কাছে তাদের পস্তাতে হবে। আর ভারত যে পরিমাণ ম্যাচ এক মৌসুমে খেলে থাকে বাংলাদেশ তা তিন বছরে খেলে। তাই পার্থক্য রয়েই যায়।
     অযথা ভারতকে দোষারোপ করে সময় নষ্ট না করি। ওরা আমাদের দলের খেলায় নিতান্তই ভীত। তাই ওদের মিডিয়া চাইছে উত্তেজনা সৃষ্টি করে দিতে। আর এসব ব্যাপারে ছোট করে বলে রাখা ভাল যে অহংকার এর ফল কিন্তু কখনোই ভাল হয় না
     শুভ কামনা বাংলাদেশ দলের জন্য......

মুহাম্মদ আরিফ
১৭/০৩/০১৫

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন